নামাযের ভিতরে তাশাহুদে বসার পদ্ধতির উপর অভিযোগের জবাবঃ
ডান পা খাড়া রেখে বাম পায়ের পাতার উপর বসাঃ
كَانَ )رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم-( يَقُولُ فِى كُلِّ رَكْعَتَيْنِ التَّحِيَّةَ وَكَانَ يَفْرِشُ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَيَنْصِبُ رِجْلَهُ الْيُمْنَى. أخرجه مسلم في باب صفة الصلاة (٤٩٨) وابن أبي شيبة، (٢٩٤٣)
অর্থ: হযরত আয়েশা রা. বলেন, তিনি ( রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক দুই রাকাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়তেন। এবং বাম পা বিছিয়ে দিতেন ও ডান পা খাড়া রাখতেন।
(মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ৪৯৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৯৪৩; আবু দাউদ তায়ালিসী, হাদীস নং ১৬৫১, আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ৩০৫০; মুসনাদে ইসহাক, হাদীস নং ১৩৩১, মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২৪০৩০, ইবনে মাজাহ,হাদীস নং ৮৯৩; আবু দাউদ, হাদীস নং ৭৮৩; আবু আওয়ানা, হাদীস নং ২০০৪)
قدمت المدينة قلت لأنظرن إلى صلاة رسول الله صلى الله عليه وسلم فلما جلس يعني للتشهد افترش رجله اليسرى ووضع يده اليسرى يعني على فخذه اليسرى ونصب رجله اليمنى. أخرجه الترمذي(٢٩٢ )وقال حسن صحيح وابن أبي شيبة، (٢٩٤٢).
অর্থ: হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. বলেন, আমি মদীনা আসলাম, আর (মনে মনে) বললাম, আমি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায দেখবো। (তিনি বলেন), যখন তিনি বৈঠক করলেন, অর্থাৎ তাশাহহুদের জন্য তখন তাঁর বাম পা বিছিয়ে দিলেন, এবং তাঁর বাম হাত বাম উরুর উপর রাখলেন। আর ডান পা খাড়া রাখলেন।
(তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং ২৯২; তিনি বলেছেন, এটি হাসান সহীহ। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৯৪২; নাসাঈ, হাদীস নং ১১৫৯; সুনানে দারিমী, ১/৩১৪, মুসনাদে আহমদ, ৪/৩১৮, তাহাবী ১/১৫২; বায়হাকী, ২/১৩২)
إنما سنة الصلاة أن تنصب رجلك اليمنى وتثنى اليسرى. أخرجه البخاري(٨٢٧) والنسائي(١١٥٧-١١٥٨) وابن أبي شيبة (٢٩٤٤).
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেছেন, নামাযে সুন্নত হলো ডান পা খাড়া রাখবে এবং বাম পা বিছিয়ে দেবে।
(বুখারী শরীফ, হাদীস নং ৮২৭; নাসায়ী শরীফ, হাদীস নং ১১৫৭, ১১৫৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৯৪৪।)
أَخْبَرَنَا الرَّبِيعُ بْنُ سُلَيْمَانَ بْنِ دَاوُدَ، قَالَ حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ بَكْرِ بْنِ مُضَرَ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ عَمْرِو بْنِ الْحَارِثِ، عَنْ يَحْيَى، أَنَّ الْقَاسِمَ، حَدَّثَهُ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، - وَهُوَ ابْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ - عَنْ أَبِيهِ، قَالَ مِنْ سُنَّةِ الصَّلاَةِ أَنْ تَنْصِبَ، الْقَدَمَ الْيُمْنَى وَاسْتِقْبَالُهُ بِأَصَابِعِهَا الْقِبْلَةَ وَالْجُلُوسُ عَلَى الْيُسْرَى .
আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সালাতের সুন্নতের মধ্যে এটাও যে, ডান পা খাড়া রাখা আর তার আঙ্গূল সমুহ কিবলার দিকে রাখা এবং বাম পায়ের উপর বসা।
(নাসাঈ শরীফঃ হাঃ ১১৬১)
মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বায় হযরত কা’ব রা., হযরত আলী রা., মুহাম্মদ ইবনে সীরীন র. ও ইবরাহীম নাখায়ী র. প্রমুখের আমলও অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
উক্ত হাদীসগুলো থেকে আমরা নামাযের ভিতরে বৈঠক করার সময় যে পদ্ধতিতে বসি তা প্রমাণ করছে। কিন্তু কিছু ফেতনা বাজ লোক অপপ্রচার করে থাকে যে, আমাদের নামায নাকি সূন্নাহসম্মত নয়! আমাদের নামায নাকি হানাফি নামায, নাউজুবিল্লাহ।
(তারা বলে থাকেন, নামাযে বৈঠকের সময় ডান পায়ের ভিতর দিয়ে বাম পা বের করে দিয়ে নিতম্বের উপর বসতে হবে। দলীল হিসেবে তারা একটি হাদীস উল্লেখ করেন,)
وَإِذَا جَلَسَ فِى الرَّكْعَةِ الآخِرَةِ قَدَّمَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَنَصَبَ الأُخْرَى وَقَعَدَ عَلَى مَقْعَدَتِهِ
‘আর যখন রাসূল (ছাঃ) শেষ রাক‘আতে বসতেন তখন বাম পাকে সামনে বাড়াতেন এবং ডান পা খাড়া রাখতেন। আর তিনি তার নিতম্বের উপর বসতেন’।
(বুখারী হা/৮২৮, ১ম খন্ড, পৃঃ ১১৪, (ইফাবা হা/৭৯০, ২/১৪৪ পৃঃ)
========================
ইমাম তিরমিযী রঃ বলেন, আলিমদের কেউ কেউ এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ইমাম শাফিঈ, আহমদ এবং ইসহাক (রহঃ)-এর অভিমতও এ-ই। তাঁরা বলেনঃ শেষ বৈঠকে নিতম্বের উপর বসবে।
অপরদিকে,
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেছেন, নামাযে সুন্নত হলো ডান পা খাড়া রাখবে এবং বাম পা বিছিয়ে দেবে।
(বুখারী শরীফ, হাদীস নং ৮২৭; নাসায়ী শরীফ, হাদীস নং ১১৫৭, ১১৫৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৯৪৪।)
ইমাম তিরমিযী রঃ বলেন, অধিকাংশ আলিম এই হাদীস অনুসারে আমল করেছেন। ইমাম সুফইয়ান সাওরী, ইবনু মুবারক এবং কূফাবাসী আলিমদের অভিমত এ-ই অর্থাৎ, ডান পা খাড়া রাখবে এবং বাম পা বিছিয়ে দেবে।
******
অপর আর একটি হাদীস থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায় যে, ওজরের (সমস্যার) কারণে নিতম্বের উপর বসা যায় যেমন হাদীসে এসেছেঃ
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রাযি.)-কে সালাতে আসন পিঁড়ি করে বসতে দেখেছেন। ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাযি.) বলেন, আমি সে সময় অল্প বয়স্ক ছিলাম। আমিও এমন করলাম। ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমার (রাযি.) আমাকে নিষেধ করলেন এবং তিনি বললেন, সালাতে (বসার) সুন্নাত তরীকা হল তুমি ডান পা খাড়া রাখবে এবং বাঁ পা বিছিয়ে রাখবে। তখন আমি বললাম, আপনি এমন করেন? তিনি বললেন, আমার দু’পা আমার ভার বহন করতে পারে না।
(বুখারী শরীফঃ হাঃ ৭৮৯)
উক্ত দীর্ঘ আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, তাশাহুদে বসার সময় ডান পা খাড়া করে রেখে বাম পায়ের পাতার উপর বসতে হবে। অধিকাংশ আলেম উলামাগণ এই নিয়মের উপর আমল করে আসছেন। কাজেই অধিকাংশ আলেমের আমলকে বাদ দিয়ে কম সংখ্যক আলেমের অভিমতের উপর আমল করতে গিয়ে সমাজে ফেতনা সৃষ্টি করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন, ফেতনা সৃষ্টি করা হত্যা অপেক্ষা কঠিন গোনাহ।