নামাজ পড়ার ফজিলত কি?

ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ হচ্ছে নামাজ, ঈমানের পরেই যার স্হান। নামাজের ফজিলত অনেক। মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে অসংখ্য যায়গায় নামাজ আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

পবিত্র কুরআনে এবং হাদীসে নামাজ আদায় করার জন্য দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক মুসলমানদের কর্তব্য হচ্ছে নামাজ শিক্ষা করা। মানুষের দেখাদেখি নামাজ আদায় না করে হাদীস গ্রন্হগুলো অধ্যয়ন করে নামাজ শিক্ষতে হবে। যদি সম্ভব না হয় তাহলে নামাজের উপর লেখা বইগুলো পাঠ করতে হবে। তাও সম্ভব না হলে নিজস্ব এলাকার আলেমদের থেকে জেনে নিতে হবে তারপরও ভুল নামাজ আদায় করা যাবে না।

নামাজ আদায় করার অর্থ হচ্ছে, মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে সন্তুষ্ট করা, সেই নামাজ আদায় করে যদি আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট না হন তাহলে সেই নামাজ কোন উপকারে আসবে? নামাজ বান্দার জন্য কিয়ামতের দিন নূর, দলীল হবে।




কুরআন থেকে দলীলঃ

মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন,

নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে নামাজ কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।

[সূরাঃ বাকারা, আয়াতঃ ২৭৭]

আর যারা নামাজ প্রতিষ্ঠাকারী, যাকাত আদায়কারী আর আল্লাহ ও কিয়ামতের দিনের উপর ঈমান রাখে এধরণের লোকদেরকে আমি অতি শিঘ্রই বিরাট প্রতিদান দান করবো।

[সূরাঃ নিসা, আয়াতঃ ১৬২]

হাদিস থেকে দলীলঃ

১। বুরাইদাহ রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, রাতের অন্ধকারে মসজিদে গমনকারী লোকদেরকে কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ জানিয়ে দাও।

[আবু দাউদ, হাঃ ৫৬১, তিরমিযী, হাঃ ২২৩]

সুবহানাল্লাহ কত বড় সুসংবাদ! পুলসিরাতের পুল পার হওয়ার সময় বুঝে আসবে এই নূরের মূল্য কত! যেন তেনো ভাবে নামায আদায় করলে এই পুরস্কার পাওয়া যাবে না। নামাযী ব্যক্তিদের সুসংবাদে অপর আরেকটি হাদীসে এসেছে,

২। আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে অথবা সন্ধায় মসজিদে গমন করে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতের মধ্যে মেহমানদারীর ব্যবস্হা করেন।

[বুখারী, হাঃ ৬৬২, মুসলিম, হাঃ ৪৬৭, আহমাদ, হাঃ ১০২৩০]

উক্ত হাদীস থেকে উপলব্ধি করুন নামাযী ব্যক্তির কত বড় মর্যাদা রয়েছে মহান আল্লাহ তাআলার নিকট? মসজিদে নামাযের উদ্দেশ্যে গমনকারীদের জন্য আল্লাহ তাআলা জান্নাতে মেহমানদারী প্রস্তুত করে রাখেন। এই মর্যাদা পেতে হলে অবশ্যই নামাযের প্রতি যত্নবান হতে হবে।

অপর আরেকটি হাদীসে এসেছে,

৩। রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, ফেরেশতাগণ তোমাদের প্রত্যেকের জন্য দোয়া করে থাকেন, যতক্ষণ সে সেই স্হানে অবস্হান করে, যেখানে সে নামাজ আদায় করেছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার ওযু নষ্ট হয়েছে। ফেরেশতারা বলেন, হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দাও, হে আল্লাহ! তার প্রতি রহম কর।

[বুখারী, হাঃ ৪৪৫, মুসলিম, হাঃ ৬৪৯, তিরমিযী, হাঃ ২১৫, নাসায়ী, হাঃ ৭৩৩]

সুবহানাল্লাহ কত বড় সুসংবাদ! নামাজী ব্যক্তির জন্য মহান আল্লাহ তাআলার ফেরেশতাগণ দোয়া করেন। ফেরেশতাগণ যাদের জন্য দোয়া করেন নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া কবুল করেন। ফেরেশতাদের দোয়া পেতে হলে অবশ্যই নামাজকে সহী শুদ্ধভাবে আদায় করতে হবে।

উক্ত দীর্ঘ আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, নামাজের দ্বারা কোন ফায়দা হাসিল করতে হলে অবশ্যই সেই নামাজ মহান আল্লাহ তাআলার নিকট গ্রহনযোগ্য হতে হবে। এবার আলোচনা করবো নামাজের ভিতর কি কি কাজ করলে নামাজের গ্রহনযোগ্যতা নষ্ট হয়ে যায়। একটি হাদীসে এসেছে,

৪। আয়েশা রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে নামাজে এদিক সেদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এটা এক ধরণের ছিনতাই, যার মাধ্যমে শয়তান বান্দার নামাজ হতে কিছু অংশ ছিনিয়ে নেয়।

[বুখারী, হাঃ ৭৫১, তিরমিযী, হাঃ ৫৯০, নাসায়ী, হাঃ ১১৯৬, আবু দাউদ, হাঃ ৯১০]

৫। হুযাইফা রাঃ হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি (নামাজে) রুকু সেজদা ঠিকমতো আদায় করছিল না। সে যখন নামাজ শেষ করল তখন তাকে হুযাইফা রাঃ বললেন, তোমার নামাজ ঠিক হয়নি। রাবী বলেন, আমার মনে হয় তিনি এ কথাও বলেছেন, (এ অবস্থায়) তোমার মৃত্যু হলে তা মুহাম্মাদ সাঃ এর তরীকার বাইরে হবে।

[বুখারী, হাঃ ৩৮২]