ফজরের জামাআত শুরু হলে দুই রাকাআত সূন্নাত নামায আদায় করা সংক্রান্ত দলীল
ফজরের দুই রাকাআত সূন্নাত নামাযের ফযিলতعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا قَالَتْ : قَالَ رَسُولُ اللهِ - صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ’’مَنْ ثَابَرَ عَلَى اثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَة فِي الْيَومِ وَاللَّيْلَة دَخَلَ الْجَنَّة أَرْبَعاً قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَينِ بَعْدَهَا وَرَكْعَتَينِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ وَرَكْعَتَينِ بَعْدَ الْعِشَاء وَرَكْعَتَينِ قَبْلَ الْفَجْر
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নিয়মনিষ্ঠভাবে দিবারাত্রে বারো রাকআত নামায পড়বে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে (অথবা জান্নাতে তার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ করা হবে); যোহরের (ফরয নামাযের) পূর্বে (এক সালামে) চার রাকআত ও পরে দুই রাকআত, মাগরেবের পর দুই রাকআত, এশার পর দুই রাকআত এবং ফজরের (ফরযের) পূর্বে দুই রাকআত।
[নাসাঈ ১৭৯৪, তিরমিযী ৪১৪৭, ইবনে মাজাহ ১১৪০, সহীহ তারগীব ৫৮০]
عَن عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا : أَنَّ النَّبيَّ ﷺ كَانَ لاَ يَدَعُ أَرْبَعاً قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الغَدَاةِ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের (ফরয নামাযের) পূর্বে চার রাকআত ও ফজরের আগে দু’ রাকআত নামায কখনো ত্যাগ করতেন না।
[বুখারী ১১৮২]
وَعَنْهُ ا قَالَتْ : لَمْ يَكُنِ النَّبِيُّ ﷺ عَلَى شَيْءٍ مِنَ النَّوَافِلِ أَشَدَّ تَعَاهُداً مِنهُ عَلَى رَكْعَتَي الفَجْرِ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দু’ রাকআত সুন্নতের প্রতি যেরূপ যত্নবান ছিলেন, সেরূপ অন্য কোন নফল নামাযের প্রতি ছিলেন না।
[বুখারী ১১৬৯, মুসলিম ১৭১৯]
وَعَنْهُ ا عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ رَكْعَتَا الفَجْرِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا رواه مُسلِمٌ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফজরের দু’ রাকআত (সুন্নত) পৃথিবী ও তাতে যা কিছু আছে সবার চেয়ে উত্তম।
[মুসলিম ১৭২১, ১৭২২]
عن أبى هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : لا تتركوا ركعتي الفجر ولو طردتكم الخيل
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ অশ্বারোহী বাহিনী তোমাদের পশ্চাদ্ধাবন করলেও তোমরা ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] ছেড়ো না।
[তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-১৬৪৭, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১২৬০, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪২৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯২৫৩]
ফজরের জামাআত শুরু হলে দুই রাকাআত সূন্নাত নামায আদায় করার দলিল
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ ফজরের জামাআত শুরু হলে দুই রাকাআত সূন্নাত নামায পড়তেন
عن أبى عثمان الأنصاري قال : جاء عبد الله بن عباس والإمام في صلاة الغداة ولم يكن صلى الركعتين فصلى عبد الله بن عباس رضي الله عنهما الركعتين خلف الإمام ثم دخل معهم وقد روى عن بن عمر مثل ذلك
আবু উসমান আলআনসারী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস এমতাবস্থায় এলেন যে, ইমাম সাহেব ফজরের নামায পড়াচ্ছিলেন। আর তিনি ফজরের [সুন্নত] দুই রাকাত পড়েননি। তাই আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন ইমামের পিছনে। তারপর তিনি ইমামের সাথে শরীক হলেন। ইবনে ওমর রাঃ এর ব্যাপারেও এমনি বর্ণিত।
[তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২০৪০]
عن أبى مجلز قال : دخلت المسجد في صلاة الغداة مع بن عمر وابن عباس رضي الله عنهم والإمام يصلى فأما بن عمر رضي الله عنهما فدخل في الصف وأما بن عباس رضي الله عنهما فصلى ركعتين ثم دخل مع الإمام (رقم الحديث-3029
আবী মিজলাস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ফজরের নামাযে একদা ইবনে ওমর রাঃ, ইবনে আব্বাস রাঃ এর সাথে মসজিদে প্রবেশ করলাম এমতাবস্থায় যে, ইমাম সাহেব নামায পড়াচ্ছিল। তখন ইবনে ওমর রাঃ কাতারে শামিল হয়ে গেলেন। আর ইবনে আব্বাস রাঃ দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন। তারপর ইমামের সাথে নামাযে শরীক হলেন।
[শরহু মাআনিল আসার, হাদীস নং-৩০২৯]
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ ফজরের জামাআত শুরু হলে দুই রাকাআত সূন্নাত নামায পড়তেন
عبد الله بن أبى موسى عن أبيه : حين دعاهم سعيد بن العاص دعا أبا موسى وحذيفة وعبد الله بن مسعود رضي الله عنهم قبل أن يصلى الغداة ثم خرجوا من عنده وقد أقيمت الصلاة فجلس عبد الله الى أسطوانة من المسجد فصلى الركعتين ثم دخل في الصلاة فهذا عبد الله قد فعل هذا ومعه حذيفة وأبو موسى لا ينكران ذلك عليه فدل ذلك على موافقتهما إياه (شرح معانى الأثار، كتاب الصلاة، باب الرجل يدخل المسجد والإمام في صلاة الفجر ولم يكن ركع أيركع أو لا يركع، رقم الحديث- 2037
আব্দুল্লাহ বিন মুসা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা সাঈদ বিন মুসা হযরত আবু মুসা আশআরী রাঃ, হযরত হুযায়ফা রাঃ এবং হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ কে ডাকলেন ফজরের নামাযের আগে। তারপর তারা বের হলেন তার [সাঈদ বিন মুসা রাঃ] নিকট থেকে এমতাবস্থায় যে, [ফজরের] নামায দাঁড়িয়ে গেছে। তখন আব্দুল্লাহ মসজিদের এক স্তম্ভের কাছে বসে গেলেন। তারপর দুই রাকাত [ফজরের সুন্নাত] নামায পড়লেন। তারপর নামাযে [ফরজের জামাতে] শরীক হলেন। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ একাজটি করলেন। সাথে ছিলেন হুযায়ফা ও আবু মুসা রাঃ। কিন্তু তাদের কেউ এটা বারন করেননি। সুতরাং এটি প্রমাণ বহন করে যে, তারাও এতে রাজি ছিলেন।
[তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২০৩৭]
عن أبى إسحاق عن عبد الله بن أبى موسى عن عبد الله : انه دخل المسجد والإمام في الصلاة فصلى ركعتي الفجر (رقم الحديث-2038)
আব্দুল্লাহ বিন আবী মুসা আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি মসজিদে প্রবেশ করলেন এমতাবস্থায় যে, ইমাম সাহেব ছিলেন নামাযে, তখন তিনি [আগে] ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন।
[তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২০৩৮]
হযরত আবু দারদা রাঃ ফজরের জামাআত শুরু হলে দুই রাকাআত সূন্নাত নামায পড়তেন
عن أبى الدرداء : أنه كان يدخل المسجد والناس صفوف في صلاة الفجر فيصلى ركعتين في ناحية المسجد ثم يدخل مع القوم في الصلاة
আবু দারদা থেকে বর্ণিত। তিনি মসজিদে প্রবেশ করলেন এমতাবস্থায় যে, লোকেরা ফজরের নামাযের কাতারে ছিল, [তথা নামায শুরু করে দিয়েছে] তখন তিনি ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন মসজিদের কিনারায়,তারপর লোকদের সাথে নামাযে শরীক হলেন।
[তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২০৪৪]
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ ফজরের জামাআত শুরু হলে দুই রাকাআত সূন্নাত নামায পড়তেন
نافعا يقول : أيقظت بن عمر رضي الله عنهما لصلاة الفجر وقد أقيمت الصلاة فقام فصلى الركعتين
হযরত নাফে বলেনঃ আমি ইবনে ওমর রাঃ কে ফজরের নামাযের জন্য জাগালাম এমতাবস্থায় যে, ফজরের নামায জামাত দাঁড়িয়ে গেছে। তখন তিনি ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন।
[শরহু মাআনিল আসার, হাদীস নং-২০৪২]
হযরত ওমর রাঃ এর জামানায় সাহাবীগণ রাঃ ফজরের জামাআত শুরু হলে দুই রাকাআত সূন্নাত নামায পড়েছেন
عن أبى عثمان النهدي قال : كنا نأتي عمر بن الخطاب رضي الله عنه قبل أن نصلى ركعتين قبل الصبح وهو في الصلاة فنصلى ركعتين في آخر المسجد ثم ندخل مع القوم في صلاتهم
আবু উসমান আননাহদী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমরা ওমর বিন খাত্তাব রাঃ এর কাছে এলাম ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত পড়ার আগে। তখন তিনি নামাযরত ছিলেন। তখন আমরা মসজিদের শেষ মাথায় ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লাম। তারপর লোকদের সাথে নামাযে শরীক হলাম।
[শরহু মাআনিল আসার, হাদীস নং-২০৪৬]
তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী রঃ ফজরের জামাআত শুরু হলে দুই রাকাআত সূন্নাত নামায পড়ার জন্য তাগিদ দিতেন
يزيد بن إبراهيم عن الحسن : أنه كان يقول إذا دخلت المسجد ولم تصل ركعتي الفجر فصلهما وان كان الإمام يصلى ثم ادخل مع الإمام
ইয়াযিদ বিন ইবরাহীম হাসান [বসরী রহঃ} থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন যে, তুমি যদি এমতাবস্থায় মসজিদে প্রবেশ কর যে, তুমি ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়নি, তাহলে তা পড় যদিও ইমাম নামায পড়াচ্ছে। তারপর ইমামের সাথে শরীক হও।
[তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২০৫০]
তাবেয়ী হযরত মাসরুক রঃ ফজরের জামাআত শুরু হলে দুই রাকাআত সূন্নাত নামায পড়তেন
الشعبي يقول : كان مسروق يجىء الى القوم وهم في الصلاة ولم يكن ركع ركعتي الفجر فيصلى ركعتين في المسجد ثم يدخل مع القوم في صلاتهم
শাবী থেকে বর্ণিত। মাসরূক লোকদের কাছে এমন সময় এলেন যখন তারা নামায পড়ছিল। তিনি সে সময় ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়েন নি। তাই তিনি মসজিদে দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন,তারপর লোকদের সাথে নামাযে শরীক হলেন।
[তাহাবী শরীফ,হাদীস নং-২০৪৮]
তবে হ্যাঁ, ফজরের দুই রাকাআত সূন্নাত নামায আদায় করতে গিয়ে যদি জামাআতের সাথে এক রাকাআত ফরজ নামাযও পাওয়া না যায়, তখন উক্ত সূন্নাত নামায আদায় না করে জামাআতে শামিল হতে হবে। তারপর যখন সূর্য উদিত হবে তখন উক্ত দুই রাকাআত সূন্নাত নামায আদায় করতে হবে।
عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ لَمْ يُصَلِّ رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ فَلْيُصَلِّهِمَا بَعْدَ مَا تَطْلُعُ الشَّمْسُ
আবু হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ফজরের দুই রাকআত (সুন্নত) না পড়ে থাকে, সে যেন তা সূর্য ওঠার পর পড়ে নেয়।
[আহমাদ, তিরমিযী ৪২৩, হাকেম ১১৫৩, ইবনে খুযাইমা ১১১৭, সহীহুল জামে’ ৬৫৪২]